চলছে বর্ষা মৌসুম। বাড়ছে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ । এটা সংক্রমিত হয় এডিস জাতীয় মশার মাধ্যমে। অনেক ধরনের মশা রয়েছে। এর মধ্যে এক ধরনের মশা রয়েছে যার নাম এডিস। এ প্রজাতির মশার জন্ম পরিষ্কার পানিতে । আমরা যারা নাগরিক জীবন যাপনে অভ্যস্ত হয়ে গেছি তারা গ্রামের কিছু স্মৃতি ধরে রাখতে ব্যাকুল। তাই জানালার পাশে ফুলের টব রাখি, প্লাস্টিকের বোতল কেটে গাছ লাগাই। জানালায় বেঁধে রেখে হলেও সবুজ গাছ, কয়েক প্রজাতির ফুল ঝুলিয়ে রাখি জানালার শিকে। এটা আমাদের অন্তর্গত সংস্কৃতি। এটা করে আমরা অনেক প্রশান্তি পাই। বর্ষার মৌসুমে এসব টবে বৃষ্টির পানি জমে। জমা পানিতে এডিস মশা বা ডেঙ্গু মশা জন্ম নেয়। ডেঙ্গু মশা এসে যখন কামড়াবে, তখন ডেঙ্গু জ্বর হবে।
এখন বাংলাদেশে ডেঙ্গু জ্বর, সাধারণ জ্বরের মতোই হয়ে গেছে। কারণ, এটি প্রতিবছরই আমাদের আক্রান্ত করে। এবার ডেঙ্গু জ্বর শুরু হয়ে গেছে। কারণ, ডেঙ্গু জ্বরের সময়টা হলো বর্ষার শুরু থেকে বর্ষার শেষ। বর্ষা যখন এলো, ডেঙ্গু জ্বর আসবে। আবার বর্ষা যখন বিদায় নিল, ডেঙ্গু জ্বর বিদায় নেবে। মাঝের সময়টিা বিজ্জনক। তাছাড়া অনেক লম্বা বর্ষার মৌসুম থাকায় আমাদের দেশে এখন জ্বরটা যেন আস্তানা গেড়ে বসেছে। ডেঙ্গু জ্বর একটি সাধারণ জ্বর, ভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার কারণে এই জ্বরটা হয়। ভাইরাসটার নামও আসলে ডেঙ্গু ভাইরাস। এ ভা্ইরাসে আক্রান্ত হলে উপসর্গ বুঝে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
ডেঙ্গুজ্বরের লক্ষণ
ডেঙ্গুজ্বর একধরনের ভাইরাস থেকে হয়। এর অপর নাম ‘ব্রেকবোন ফিভার’। কারণ ডেঙ্গুজ্বরে প্রচুন্ড শরীর ব্যথা হয় যা হাড় ভাঙ্গা ব্যথার মত তীব্র। আমাদের দেশে জুলাই থেকে ডিসেম্বর মাসে এর প্রাদুর্ভাব বেশী দেখা দেয়।ডেঙ্গু ভাইরাস কয়েক প্রকারের। তবে ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ অন্য ভাইরাস জ্বরের মতোই। হঠাৎ করেই প্রচণ্ড জ্বরে (১০৩-১০৪ ডিগ্রি) আক্রান্ত হয়। এর সঙ্গে থাকে মাথাব্যথা, শরীরব্যথা, জয়েন্টে ব্যথা, চোখের নিচে ব্যথা ( চোখ নাড়ালে ব্যথা অনুভূত হয়)। শরীরে বা জয়েন্টে বেশি ব্যথা হয় বলে এ জ্বরের অন্য নাম ব্যাকবোন ফিভার। জ্বরের সঙ্গে শরীরে র্যাশ বা লালচে ভাব দেখা দেয়।
সাধারণত জ্বরের দ্বিতীয় দিন থেকে ত্বক লালচে ভাব ধারণ করে। সাধারণ জ্বর ২ থেকে ৭ দিন পর কমে যায়। জ্বর কমে যাওয়া মানেই রোগমুক্তি নয়, বরং তা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। জ্বর কমার ২-৩ দিন পরের সময়টা বেশি মারাত্মক বলে মনে করা হয় । এ সময় শরীরে অনেক জটিলতা দেখা দেয়। ডেঙ্গু জ্বরে রক্তে অণুচক্রিকা কমে গেলে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। এ সময় বেশি সচেতন থাকতে হয়। আক্রান্ত ব্যক্তি বারবার বমি বা রক্তবমি করতে পারে, পেটে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হতে পারে, নাক দিয়ে রক্ত পড়তে পারে, মাড়ি থেকে রক্তপাত হতে পারে, চোখে রক্তজমাট বাঁধতে পারে। এ ছাড়া শরীরের ভেতরে রক্তক্ষরণ হতে পারে। এ ক্ষেত্রে প্রচন্ড পেটব্যথা, আলকাতরার মতো কালো দুর্গন্ধযুক্ত মল হতে পারে, মল ও প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত পড়তে পারে। একেই বলে ডেঙ্গু হেমোরজিক ফিভার।
আক্রান্ত হলে কী করবেন
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে ভয়ের কিছু নেই। সাধারণ ভাইরাস জ্বরের মতোই এর চিকিৎসা। এ জন্য আলাদা কোনো চিকিৎসা নেই। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীকে চিকিৎসার ক্ষেত্রে অবশ্যই কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। রোগীকে অ্যাস্পিরিন অথবা অন্য কোনো জ্বরের বা ব্যথার ও অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ সেবন থেকে বিরত থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে, ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক কোনো সাহায্য করে না। জ্বর কমানোর জন্য রোগী শুধু প্যারাসিটামল সেবন করতে পারে। ডেঙ্গুজ্বর হলে রোগীকে বেশি বেশি তরল জাতীয় খাবার খেতে দিতে হবে। যেমন- পানি, খাওয়ার স্যালাইন, স্যুপ, দুধ, তাজা ফলের রস ও শিশুদের জন্য মায়ের দুধ ইত্যাদি। অনেক ক্ষেত্রে আবার ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হলে শরীরে অত্যাধিক তাপমাত্রার কারণে দেহে পানিশূন্যতা দেখা দেয়।
আর এ পানিশূন্যতায় কোষের ভেতরের তরল পদার্থ কমে যায়, কোষের চারপাশের রক্তনালিতে চাপ পড়ে। রক্তনালিতে চাপের কারণে দেহের ভেতর শুরু হয় ইন্টারনাল ব্লিডিং বা রক্তক্ষরণ। আর এ জন্য রক্তের প্লেটলেট বা অনুচক্রিকা কমতে থাকে। এই প্লেটলেট বা অনুচক্রিকা কমার কারণে দেহে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে না। ফলে রক্তক্ষরণ আরও বাড়তে থাকে ও রোগীর অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে। আর দেহে এভাবে প্লেটলেট কমতে থাকলে একসময় শক সিনড্রোমের কারণে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে। তাই ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্রতিদিন রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে রক্তের প্লেটলেটের মাত্রা জানতে হবে ও প্রয়োজনে বাইরে থেকে রোগীর দেহে প্লেটলেট সরবরাহ করতে হবে। তবে জেনে রাখা ভালো, সঠিক চিকিৎসা পেলে ডেঙ্গুজ্বরে এখন রোগী মারা যায় না। তাই ডেঙ্গুজ্বর হলে আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শমতো চিকিৎসা নিন ও সুস্থ থাকুন।
Array