দ্রুত ওজন কমানোর উপায় অনেক আছে। তবে অধিকাংশ উপায়েই সারাদিন আপনার ক্ষুধা লেগে থাকবে। এ কারনে আপনার যদি প্রবল ইচ্ছাশক্তি না থাকে, তাহলে অল্প কিছুদিন পরেই আপনার ধৈর্য্য শেষ হয়ে যাবে। এবং আপনি ওজন কমানোর চেষ্টা করা বন্ধ করে দিবেন।

 

তবে এই আর্টিকেলে তুলে ধরা ওজন কমানোর উপায় অনুসরণ করলে আপনারঃ

 

  • ক্ষুধা বেশ কমে যাবে
  • দ্রুত ওজন কমবে, সারাদিন ক্ষুধা লেগে থাকবে না
  • একই সাথে শারীরিক অবস্থার উন্নতি হবে

 

দ্রুত ওজন কমানোর ৩টি সহজ উপায়ঃ

 

১) চিনি ও শর্করা (কার্বোহাইড্রেট) খাওয়া কমান

ওজন কমানোর উপায় - ভাত কম খান

এই প্ল্যানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে শর্করা ও চিনি খাওয়া কমিয়ে দেওয়া। এসব খাদ্যে প্রচুর ক্যালরি থাকে। তাই এগুলো খেলে অনেক ওজন বাড়ে। এছাড়া এগুলো খাওয়া বাদ দিলে ক্ষুধা কমে যায়। এর ফলে মানুষ কম খায়।

 

এগুলো কম খেলে শরীর শক্তির জন্য কার্ব (শর্করা) পোড়াতে না পেরে ফ্যাট বা চর্বি পোড়ানো শুরু করে।

কার্ব কম খাওয়ার আরেকটা উপকারিতা হচ্ছে, এর ফলে ইনসুলিন লেভেল কমে যায়। এতে কিডনি জমে থাকা অতিরিক্ত সোডিয়াম এবং পানি শরীর থেকে বের করে ফেলে। এ কারনে ওজন একটু কমে।

 

আপনাকে কার্ব খাওয়া একেবারে বাদ দিয়ে দিতে হবে না। তবে প্রতিদিন ২০-৫০ গ্রামের বেশি কার্ব না খাওয়ার চেষ্টা করুন।

 

যেসব খাদ্যে প্রচুর কার্ব থাকেঃ

 

  • চাল ও আটাঃ ১০০ গ্রাম চালে ২৮ গ্রাম ও ১০০ গ্রাম আটাতে ৭৬ গ্রাম কার্ব থাকে। আমরা প্রায় সবাই তিন বেলা ভাত বা রুটি খাই। এ কারনে এই প্ল্যান অনুসরণ করতে আমাদের অনেকের কষ্ট হতে পারে। তবে যদি আপনি এটা অনুসরণ করতে পারেন, তাহলে ওজন কমানো প্রচুর সহজ হবে।
  • আলুঃ ১০০ গ্রাম আলুতে ১৭ গ্রাম কার্ব থাকে।
  • ছোলা, মটর ডালঃ ১০০ গ্রাম ছোলাতে ২০ গ্রাম ও ১০০ গ্রাম মটরের ডালে ৬১ গ্রাম কার্ব থাকে।
  • চিনি, মধুঃ চিনি সম্পূর্ণ কার্বোহাইড্রেট।
  • ফ্যাক্টরিতে তৈরি খাদ্য

 

এগুলো খাওয়া কমিয়ে দিলে প্রথম সপ্তাহেই ৪-৫ কেজি ওজন কমে যাওয়া অস্বাভাবিক কিছু না।

 

২) প্রোটিন, ফ্যাট এবং সবজি খান

ওজন কমানোর উপায় - ডিম খাঁন

প্রত্যেক বেলাতে আপনাকে প্রোটিন প্রচুর থাকে এমন একটা খাদ্য, ফ্যাট প্রচুর থাকে এমন একটা খাদ্য ও কম কার্বযুক্ত সবজি খেতে হবে। এভাবে খেলে আপনার ২০-৫০ গ্রামের বেশি কার্ব খাওয়া হবে না।

 

যেসব খাদ্যে প্রচুর প্রোটিন আছে

 

  • মাংসঃ গরু, মুরগি, ছাগল, ইত্যাদি।
  • মাছঃ সামুদ্রিক মাছ, চিংড়ি, ইত্যাদি।
  • ডিমঃ কুসুম যুক্ত ডিম সবচেয়ে ভালো।

 

আপনার শরীরের প্রতি কেজি ওজনের জন্য আপনাকে প্রতিদিন ০.৮ গ্রাম প্রোটিন খেতে হবে। তার মানে আপনার ওজন ৮০ কেজি হলে আপনাকে প্রতিদিন ৬৪ গ্রাম প্রোটিন খেতে হবে। ১০০ গ্রাম চামড়া ছাড়া মুরগির মাংসে ৩১ গ্রাম প্রোটিন থাকে। আর ১০০ গ্রাম গরুর মাংসে ২৬ গ্রাম ও ১০০ গ্রাম ছাগলের মাংসে ২৫ গ্রাম প্রোটিন থাকে। আর একটা মিডিয়াম সাইজের ডিমে ৬ গ্রাম প্রোটিন থাকে।

 

প্রতিদিন যথেষ্ট পরিমাণ প্রোটিন খাওয়ার উপকারিতা বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। প্রতিদিন যথেষ্ট পরিমাণ প্রোটিন খাওয়া শুরু করলে মেটাবোলিজম ৮০-১০০ ক্যালরি পর্যন্ত বাড়ে। মেটাবোলিজম যত বেশী হয়, ওজন কমানো তত সহজ হয়।

এছাড়া ক্ষুধা কমে, খাওয়া নিয়ে চিন্তা কমতে পারে, শেষরাত্রে খাবার খাওয়ার ইচ্ছা কমে। এছাড়া এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যথেষ্ট পরিমাণে প্রোটিন খাওয়া শুরু করার কারনে গবেষণায় অংশ নেওয়া মানুষ প্রতিদিন ৪০০~ ক্যালরি কম খাওয়া শুরু করেছে।

 

যেসব সবজিতে কার্ব কম থাকে:

 

  • ফুলকপি
  • সবুজ শাক
  • টমেটো
  • পাতাকপি
  • লেটুস
  • শশা
  • গাজর
  • বেল মরিচ, ক্যাপসিকাম
  • শতমূলী
  • মাশরুম
  • ধুন্দল
  • মটরশুটি
  • মুলা
  • বেগুন
  • বাঁধাকপি
  • শালগম
  • কুমড়া, ইত্যাদি

 

প্রতিদিন এসব সবজি অনেক খান। এগুলো প্রচুর পরিমানে খেলেও ২০-৫০ গ্রামের বেশি কার্ব খাওয়া হবে না।

 

যেসব খাদ্যে ফ্যাট থাকে:

 

  • অলিভ অয়েল (জলপাই এর তেল)
  • নারকেল তেল
  • মাখন

 

প্রতিদিন ২-৩ বেলা খান। যদি বিকালবেলা ক্ষুধা লাগে, তাহলে এক্সট্রা আরেকবেলা খান।

 

৩) সপ্তাহে ৩ দিন ভারী ব্যায়াম করুন

ওজন কমানোর উপায় - ব্যায়াম করুন

ওজন কমানোর জন্য আপনাকে ব্যায়াম করতে হবে না। তবে ব্যায়াম করা শরীরের জন্য ভালো।

 

সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে সপ্তাহে ৩ বার জিমে যাওয়া। জিমে যেয়ে কিছুক্ষণ ওয়ার্ম আপ করে ভারী জিনিস তোলার ব্যায়াম করুন।

ভারী জিনিস তুললে বেশ পরিমাণে ক্যালরি পুড়বে। ওজন কমলে মেটাবোলিজম স্লো হতে থাকে। এর ফলে ওজম কমাতে কষ্ট একটু বাড়ে। ব্যায়াম করলে এটা হয় না।

 

যদি আপনার জিমে যাওয়া সম্ভব না হয় বা ভারী ব্যায়াম করতে না চান, তাহলে আধাঘন্টা করে হাটতে, দৌড়াতে, সাইকেল চালাতে অথবা সাঁতার কাটতে পারেন।

 

সপ্তাহে একবার করে কার্ব খেতে পারেন

সপ্তাহে একবার করে ওজন কমানোর প্লান থেকে বিরতি নিয়ে কার্ব খেতে পারেন। তবে শুধুমাত্র স্বাস্থ্যকর কার্ব খান। যেমনঃ চাল, আলু, বাদামী আটা, ইত্যাদি।

 

তবে শুধুমাত্র একদিন কার্ব খান। যদি সপ্তাহে একদিনের বেশি খাওয়া শুরু করেন, তাহলে খুব বেশি ওজন কমবে না।

 

এই দিনে আপনার ওজন একটু বাড়তে পারে। তবে এটা নিয়ে চিন্তা করেন না। শরীরে পানি জমার কারনে এই ওজনটা বাড়ছে। এক-দুই দিনের মধ্যে এই ওজন কমে যাবে।

 

ওজন দ্রুত ও সহজে কমানোর জন্য আরো ৭টি পরামর্শ

ওজন কমানোর উপায়

  1. সকালবেলা উচ্চ প্রোটিন যুক্ত নাস্তা খানঃ সকালবেলা উচ্চ প্রোটিন যুক্ত নাস্তা খেলে সারাদিন ক্ষুধা কম লাগতে পারে। এর ফলে কম খাওয়া হবে।
  2. চিনিযুক্ত পানীয় ও ফলের জুস খাওয়া থেকে বিরত থাকুনঃ এগুলোতে প্রচুর ক্যালরি থাকে। একারনে এগুলো না খেলে ওজন কমানো সহজ হয়। ফলের জুস খেতে চাইলে বোতলজাত জুসের বদলে বাসায় টাটকা ফল থেকে জুস করে খান।
  3. প্রত্যেকবেলা খাওয়ার আধাঘন্টা আগে পানি পান করুনঃ এটা করলে খাওয়া কম হয় এবং ওজন কমানো সহজ হয়।
  4. চা বা কফি পান করতে পারেনঃ আপনার যদি চা বা কফি পান করার অভ্যাস থাকে, তাহলে এগুলোতে থাকা ক্যাফেইনের কারনে মেটাবোলিজম ৩-১১% পর্যন্ত বাড়তে পারে। তবে আপনার চা বা কফি পান করার অভ্যাস না থাকলে শুরু করার কোন দরকার নেই।
  5. অপ্রক্রিয়াজাত খাদ্য খানঃ প্যাকেটে পাওয়া যায়, এমন খাদ্য না খাওয়ার চেষ্টা করুন। অপ্রক্রিয়াজাত খাদ্য অধিকাংশ সময়ই স্বাস্থ্যকর হয় এবং এগুলো খেলে সহজে পেট ভরে।
  6. ধীরে ধীরে খানঃ গবেষণায় দেখা গিয়েছে, দ্রুত খাওয়া মানুষদের ওজন বেশি বাড়ে। অন্যদিকে ধীরে ধীরে খেলে দ্রুত পেট ভরে।
  7. প্রতিরাত্রে যথেষ্ট পরিমাণে ঘুমানঃ ঘুম শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। প্রতিরাত্রে যথেষ্ট পরিমাণে না ঘুমালে ওজন বাড়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

 

কত দ্রুত আপনার ওজন কমবে

এই প্ল্যান অনুসরণ করলে প্রথম সপ্তাহে আপনার ২-৪ কেজি ওজন কমতে পারে। তারপর অল্প অল্প করে নিয়মিত ওজন কমতে থাকবে। যদি আপনি সপ্তাহে সাত দিনই এই প্ল্যান অনুসরণ করেন তাহলে প্রতি সপ্তাহে ১-১.৫ কেজি ওজন কমবে। যেহেতু এই প্ল্যানে ক্ষুধা লেগে থাকে না, সেহেতু দীর্ঘদিন ধরে এটা অনুসরণ করা সহজ হয়।

 

এই প্ল্যান অনুসরণ করলে প্রথম কয়েকদিন আপনার একটু অদ্ভুত অদ্ভুত লাগবে। আপনার শরীর সারাজীবন শক্তির জন্য কার্ব পুড়িয়েছে। এখন ফ্যাট পোড়াচ্ছে। এটাতে অভ্যস্থ হতে একটু সময় লাগবে। সপ্তাহখানেক পরে আপনার আর অস্বাভাবিক লাগবে না।

 

ওজন কমাতে আপনাকে অনাহারে থাকতে হবে না

আপনি যদি এই ওজন কমানোর উপায় অনুসারে কার্ব একেবারে কম খান এবং প্রোটিন, ফ্যাট ও সবজি খান, তাহলে প্রতিদিন কতটুকু খাচ্ছেন, তা আপনাকে মাপতে হবে না। আপনি পেট ভরা পর্যন্ত কোন চিন্তা ছাড়াই খেতে পারবেন।

 

আপনার যদি শারীরিক কোন সমস্যা থাকে, তাহলে এই ওজন কমানোর উপায় অনুসরণ করা শুরু করার আগে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন।

আপনি যদি এই ওজন কমানোর উপায় অনুসরণ করতে না পারেন, তার মানে এই না যে আপনি ওজন কমাতে পারবেন না। বা ওজন কমাতে আপনাকে না খেয়ে থাকতে হবে। ওজন কমানোর নির্দিষ্ট কোন সিস্টেম নেই। অন্যান্য ওজন কমানোর উপায় অনুসরণ করেও আপনি ওজন কমাতে পারবেন।