
ভাষা আন্দোলন বাঙালির ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় ঘটনা। মাতৃভাষার ওপর আঘাত এলে তা মেনে নেওয়া যায় না, বাঙালিও তা মেনে নেয়নি। পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরই বাঙালিরা বুঝতে শুরু করে যে, এ রাষ্ট্র আসলে তাদের জন্য সৃষ্টি হয়নি। সব কিছুতেই ছিল বৈষম্য। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী শুধু চাকরি-বাকরি বা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেই নয়, বাংলার মানুষকে দমিয়ে রাখতে শুরু করে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন। আর সেই আগ্রাসনটা ভয়ঙ্কররূপে আসে ভাষার ওপর আঘাতের মাধ্যমে।
মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠে বাংলার মাঠঘাট তেপান্তরের মানুষ। তবে এ আন্দোলনের অগ্রভাগে ছিলেন দেশের ছাত্র-যুবারা। শাসকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে তারা মুখের ওপর প্রতিবাদ করেছেন। বুলেটও তাদের দমিয়ে রাখতে পারেনি।
আর পারবেই বা কীভাবে? কেননা প্রতিটি বাঙালি মনেপ্রাণে বিশ^াস করতেন ‘বিনে স্বদেশীয় ভাষা, পুরে কি আশা?’ মানুষ তার মনের আশা পূরণের জন্য, আশা ব্যক্ত করার জন্য ভাষার ওপর নির্ভর করে। সেই ভাষার ওপর আক্রমণ মেনে নেয়নি বাঙালি। ’৫২-এর একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের চূড়ান্ত একটি দিন, কিন্তু বাংলার মানুষকে ভাষা রক্ষার জন্য, ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় যে আন্দোলন তা শুরু করে আরও আগে থেকেই। বস্তুতপক্ষে, ১৯৪৮ সালে এ আন্দোলনের সূচনা ঘটে যার রক্তাক্ত পরিসমাপ্তি ঘটে ’৫২-তে।