• ঢাকা, বাংলাদেশ

অসাধু চক্রের কারসাজিতেই ডলারের দাম দেশে অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে 

 admin 
21st Aug 2022 8:11 am  |  অনলাইন সংস্করণ

নিউজ ডেস্ক:অসাধু চক্রের কারসাজিতেই ডলারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। চক্রের সদস্যরা মানি চেঞ্জার্সের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে বেআইনিভাবে বেশি দামে নগদ ডলার কিনে মজুত করে বাজারে সঙ্কটের মাত্রা বাড়িয়ে লাগাম ছাড়া দাম বাড়িয়ে ডলার বিক্রি করেছে। ওই চক্রের বিরুদ্ধে ডলার পাচারেরও ভয়াবহ অভিযোগ উঠেছে। চক্রটি বেআইনিভাবে ডলার মজুত করে তা কতিপয় ব্যবসায়ীর কাছে সরবরাহ করেছে। পরে যেগুলো হুন্ডি মাধ্যমে বিদেশে পাচার করা হয়েছে। বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ) পরিচালিত একটি বিশেষ পরিদর্শন প্রতিবেদনে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য উঠে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনে বর্তমানে দেশে ২৩৫টি বৈধ মানি চেঞ্জার্স প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কিন্তু অবৈধভাবে সক্রিয় রয়েছে শত শত প্রতিষ্ঠান। এখন অবৈধ ওসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো সক্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রাথমিক অভিযানে যাদের ভুলত্রুটি পাওয়া যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। আবার প্রয়োজনে সময় নিয়ে তদন্ত করে আইন অনুযায়ী ব্যাংক ও মানি চেঞ্জারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ডলারের কারসাজি রোধে খোলা বাজার ও একচেঞ্জ হাউজগুলোতে ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কারসাজির অপরাধে ইতোমধ্যে ৫টি মানি চেঞ্জারের লাইসেন্স স্থগিত করা হয়েছে। পাশাপাশি ৪৫টিকে শোকজ করা হয়েছে। তাছাড়া লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা করায় ৯টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বলা হয়েছে।
সূত্র জানায়, খোলা বাজারে সাম্প্রতিক সময়ে নগদ ডলারের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধানে বিএফআইইউ মানি চেঞ্জার্স প্রতিষ্ঠানগুলোতে তদন্ত শুরু করে। তার আগে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা থেকেও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের নাম পাঠানো হয়। সেগুলো হুন্ডি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে সন্দেহের তালিকায় ছিল। ওই তালিকা ধরে বিএফআইইউ তদন্ত করে ১৩টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে হুন্ডির ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছে। বিএফআইইউ মানি লন্ডারিংবিষয়ক ঘটনাগুলো তদন্ত করে থাকে। বিএফআইইউর পরিদর্শক দল অভিযুক্ত ১৩টি প্রতিষ্ঠানে সরেজমিন গিয়ে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছে। ইতোমধ্যে মাঠপর্যায়ের তদন্ত শেষ করে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। সুনির্দিষ্টভাবে অপরাধ চিহ্নিত করে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সূত্র আরো জানায়, খোলা বাজারে ডলারের দাম বেড়ে সর্বোচ্চ ১২১ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। তার আগে এক দফা ১০৪ টাকায় উঠে। তারপর বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) ও ডিবি পুলিশ খোলা বাজারে তদন্ত শুরু করলে ডলারের দাম ১০০ টাকার নিচে চলে আসে। তারপর গত মাসে আবার তা বেড়ে ১০০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। একদিনের ব্যববধানে খোলাবাজারে ডলারের দাম ১০৬ টাকা থেকে বেড়ে ১১২ টাকায় উঠে যায়। তখন ওসব সংস্থা আবার তদন্ত শুরু করলে ডলারের দাম কমে ১০৬ টাকায় নেমে যায়। পরে ডলারের দাম ফের বেড়ে ১২১ টাকায় উঠে। ব্যাংকেও নগদ ডলারের দাম বেড়ে সর্বোচ্চ ১০৯ টাকায় উঠে। যদিও আমদানির জন্য ৯৫ টাকা দরে ডলার বিক্রি হচ্ছে। ডলারের দাম বৃদ্ধির কারসাজির সাথে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলো ডলার বিক্রির ক্ষেত্রে পাসপোর্টে বৈদেশিক মুদ্রা এনডোর্স করেনি। এমনকি ডলার কেনাবেচার কোনো তথ্যও রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করেনি। অর্থাৎ হুন্ডির মাধ্যমে তারা ডলার কিনেছে। একই সঙ্গে হুন্ডির মাধ্যমে বিক্রিও করেছে।
এদিকে বিএফআইইউ থেকে যে ১৩টি প্রতিষ্ঠানে তদন্ত করা হয় সেগুলোর সবকটিই ঢাকার মতিঝিল, দিলকুশা, পল্টন ও গুলশান এলাকায় অবস্থিত। ওসব প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন থেকে বেআইনিভাবে মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা করে আসছে। তারা প্রথমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে লাইসেন্স নিয়েছিল। পরে তাদের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও আর নবায়ন করেনি। ফলে তারা প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বেআইনিভাবে ব্যবসা করছে। লাইসেন্স না থাকায় তারা ডলার বেচাকেনার কোনো তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে দিত না। এমনকি তাদের কোনো জবাবহিদিতাও ছিল না। বিএফআইইউর পরিদর্শক দল ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর রেজিস্টার বুক অনুসন্ধান করে পাওয়া তথ্যের সঙ্গে নগদ ডলার জমা রাখার মিল পায়নি। নিয়মানুযায়ী মানি চেঞ্জার্স প্রতিষ্ঠানগুলো যেসব ডলার কেনাবেচা করবে তার একটি তালিকা রেজিস্টার বুকে লিপিবদ্ধ থাকবে। তার ভিত্তিতে ভল্টে নগদ ডলার জমা থাকবে। কিন্তু তাদের ক্যাশ রেজিস্টারে জমা ডলারের কয়েকগুণ বেশি ডলার ভল্টে পাওয়া গেছে। ওসব প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের কাছ থেকে বাজারদরের চেয়ে বেশি দামে ডলার কিনতো। ফলে গ্রাহকরা তাদের কাছেই যেত। পুরো চক্রটি এভাবে বাজারে ডলারের দাম বাড়িয়েছে। তাছাড়া ডলার কিনলেও তারা সেগুলো বিক্রি করে বাজরের স্বাভাবিক ফ্লো ঠিক রাখেনি। বরং বেশি মুনাফার জন্য জমিয়ে রেখে কয়েকজন ব্যবসায়ীর কাছে ওসব ডলার বিক্রি করেছে। ডলার কেনার জন্য ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আগাম অর্থ নেয়ার প্রমাণও মিলেছে। ওসব অর্থে নগদ ডলার কিনে মজুত করেছে। ধারণা করা হচ্ছে পরে সেগুলো দেশ থেকে পাচার হয়েছে। কেননা ওসব ডলার তারা কোথায় কিভাবে বিক্রি করেছে তার কোনো তথ্য লিখিত আকারে পাওয়া যাচ্ছে না। তাছাড়া কোনো মানি চেঞ্জার্স শাখা খুলতে পারে না। অথচ ওই ১৩টি প্রতিষ্ঠানের কোনো কোনোটি ঢাকায়ই ১০টি বেশি শাখা খোলার নজির রয়েছে। তার বাইরে চট্টগ্রাম, সিলেট ও বেনাপোলেও শাখা খুলে তারা চড়া দামে ডলার সংগ্রহ করতো।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, দেশের ভেতর ডলার আসার তুলনায় যাচ্ছে বেশি। তাই বিদেশে যাওয়ার সময় ক্যাশ ডলার বহনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিরুৎসাহিত করেছে। চিকিৎসা, শিক্ষা বা ভ্রমণ থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রেই ডলারের আউটফ্লো বেড়েছে। কিন্তু নানা সীমাবদ্ধতার কারণে ওই পরিমাণ ডলার দেশে আসছে না। এ কারণেই খোলা বাজারে ডলারের মূল্য হু হু করে বাড়ছে। বাজারে ডলার সংকট ও রিজার্ভ কমার অন্যতম কারণ হলো আমদানি বৃদ্ধি। আমদানির তুলনায় বাংলাদেশের রপ্তানি অনেক কম। তাই আমদানি-রপ্তানির মধ্যে শূন্যস্থান পূরণ করতে হলে রপ্তানি বৃদ্ধির বিকল্প নেই। বাজার স্বাভাবিক রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়মিত রিজার্ভ থেকে ডলার সরবরাহ করে যাচ্ছে। তা অব্যাহত থাকবে। তবে রেমিট্যান্স বৃদ্ধির দিকেও নজর দিতে হবে। আর বৈদেশিক মুদ্রা বেচাকেনা সহজ করতেই মানি চেঞ্জার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর লাইসেন্স দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা এখন আইনের বাইরে চলে গেছে। যে কারণে তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কঠোর অবস্থান নিয়েছে। নিয়মনীতি লঙ্ঘনের দায়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যবস্থা নিচ্ছে। যেগুলো লাইসেন্স ছাড়া বেআইনিভাবে ব্যবসা করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নেবে। তার বাইরে যেগুলো মানি লন্ডারিংয়ের মতো গুরুতর অপরাধ করেছে তাদের বিরুদ্ধে বিএফআইইউ ব্যবস্থা নিচ্ছে।

Array
We use all content from others website just for demo purpose. We suggest to remove all content after building your demo website. And Dont copy our content without our permission.
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
এই বিভাগের আরও খবর
 
Jugantor Logo
ফজর ৫:০৫
জোহর ১১:৪৬
আসর ৪:০৮
মাগরিব ৫:১১
ইশা ৬:২৬
সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১