• ঢাকা, বাংলাদেশ

কে এই সালমান রুশদি? 

 admin 
14th Aug 2022 8:26 am  |  অনলাইন সংস্করণ

নিউজ ডেস্ক:নিউইয়র্কে হামলার শিকার সালমান রুশদি গত পাঁচ দশক ধরে তার সাহিত্য কর্মের জন্যই বারবার হত্যার হুমকি পেয়েছেন। তার অনেক উপন্যাসই ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছিলো যার মধ্যে আছে ১৯৮১ সালে বুকার পুরষ্কার জেতা তার দ্বিতীয় উপন্যাস মিডনাইট চিলড্রেন। তবে ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত হওয়া তার চতুর্থ বই স্যাটানিক ভার্সেস হলো তার সবচেয়ে বিতর্কিত কাজ যা তাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নজিরবিহীন বিপদে ফেলে দেয়। বইটি প্রকাশের পর তাকে হত্যার হুমকি আসে যা তাকে আত্মগোপনে যেতে বাধ্য করে। ব্রিটিশ সরকার তখন তাকে পুলিশী নিরাপত্তার আওতায় নিয়ে আসে। যুক্তরাজ্য ও ইরানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক নষ্ট হয়। পশ্চিমা বিশ্বের লেখক ও বুদ্ধিজীবীরা মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান নিয়ে বইটির কারণে মুসলিমদের দিক থেকে আসা প্রতিক্রিয়ার তীব্র সমালোচনা করেন। ১৯৮৯ সালে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেনি মিস্টার রুশদির মৃত্যুদ- ঘোষণা করে ফতোয়া জারি করেন।
ভারতে জন্ম, যুক্তরাজ্যে পড়াশোনা
সালমান রুশদি ভারতের স্বাধীনতার দু মাস আগে বোম্বেতে (বর্তমান মুম্বাই) জন্মগ্রহণ করেছিলেন। চৌদ্দ বছর বয়সে তাকে ইংল্যান্ডে পাঠানো হয়। তখন ভর্তি হয়েছিলেন রাগবি স্কুলে। পরে ইতিহাসে অনার্স ডিগ্রি নেন ক্যামব্রিজের মর্যাদাপূর্ণ কিংস কলেজ থেকে। এরপর ব্রিটেনের নাগরিকত্ব নেন এবং তার মুসলিম বিশ্বাস থেকে সরে দাঁড়ান। কিছুদিন অভিনেতা হিসেবে কাজ করা ছাড়াও বিজ্ঞাপনের কপিরাইটিংয়ের কাজও করেছেন। তার প্রথম প্রকাশিত বই গ্রিমাস খুব একটা সাফল্য পায়নি। তবে সমালোচকরা তখনই তার মধ্যে সম্ভাবনা খুঁজে পেয়েছিলেন। এরপর দ্বিতীয় বই মিডনাইট চিলড্রেন লিখতে তিনি পাঁচ বছর সময় নেন। বইটি বুকার পুরষ্কার লাভ করে। এটি ছিলো দারুণভাবে প্রশংসিত এবং বিক্রি হয়েছিলো প্রায় পাঁচ লাখ কপি। মিডনাইট চিলড্রেন ছিলো ভারতকেন্দ্রিক। এরপর তার তৃতীয় বই শেইম প্রকাশিত হয় ১৯৮৩ সালে। যার বিষয়বস্তু ছিলো পাকিস্তানকেন্দ্রিক। এর চার বছর পর মি. রুশদী লিখেছিলেন দ্যা জাগুয়ার স্মাইল যা ছিলো নিকারাগুয়া ভ্রমণভিত্তিক।
স্যাটানিক ভার্সেস
আর ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত হয় দ্য স্যাটানিক ভার্সেস যা তার প্রাণনাশের হুমকি সৃষ্টি করে। পরাবাস্তববাদী উত্তরাধুনিক এই বইটি তীব্র ক্ষোভের তৈরি করে মুসলিমদের অনেকের মধ্যে। তারা মনে করেন বইটিতে ধর্ম অবমাননা করা হয়েছে। ভারতই প্রথম এই বইটি নিষিদ্ধ করেছিলো। পরে পাকিস্তানসহ অন্য বেশ কিছু মুসলিম দেশ এবং দক্ষিণ আফ্রিকাও একই পদক্ষেপ নেয়। উপন্যাসটির প্রশংসাও করেছেন অনেকে। এটি পেয়েছিলো দ্যা হুইটব্রেড প্রাইজ। কিন্তু দু মাসের মধ্যেই বইটিকে ঘিরে দানা বাঁধে প্রতিবাদ বিক্ষোভ। কিছু মুসলিম মনে করেন বইটিতে ইসলাম ধর্মকে উপহাস করা হয়েছে। বইটিতে দুজন যৌনকর্মীর এমন নাম দেয়া হয়েছিলো যা ইসলামের নবীর দুজন স্ত্রীর নামের সাথে মিলে গিয়েছিলো। তিনি বইটিতে এমন দুটো লাইন লিখেছিলেন যেখানে তিনি দাবি করেন যে ইসলামের নবী কোরান থেকে সেগুলো বাদ দিয়েছেন।
মুসলিম বিশ্বে বিক্ষোভ
১৯৮৯ সালের জানুয়ারিতে ব্রাডফোর্ডের একদল মুসলিম বইটির একটি কপি পুড়িয়ে দেয় এবং নিউজ এজেন্ট ডব্লিউএইচএস স্মিথ তাদের ডিসপ্লে থেকে বইটি সরিয়ে নেয়। রুশদি ধর্ম অবমাননার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন। ফেব্রুয়ারিতে উপমহাদেশে রুশদি বিরোধী দাঙ্গায় অনেকে নিহত হন। তেহরানে ব্রিটিশ দূতাবাসে পাথর ছোঁড়া হয় আর রুশদীর মাথার দাম ঘোষণা করা হয় তিন মিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে যুক্তরাজ্যে কিছু মুসলিম নেতা লেখা পরিবর্তনের আহবান করলেও আরেকটি অংশ খোমেনিকে সমর্থন করে। যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও অন্য পশ্চিমা দেশগুলো হত্যার হুমকির তীব্র নিন্দা করে।
হত্যার হুমকি
রুশদি ইতোমধ্যেই স্ত্রীসহ পুলিশী নিরাপত্তার অধীনে আত্মগোপনে চলে যান এবং মুসলিমদের ক্ষোভের কারণ হওয়ায় দুঃখও প্রকাশ করেন। কিন্তু আয়াতুল্লাহ খোমেনি তার ঘোষিত মৃত্যুদ- বহাল রাখেন। বইটির প্রকাশনা সংস্থা ভাইকিং পেঙ্গুইনের লন্ডন অফিসে ইট পাটকেল ছোঁড়া হয় আর নিউইয়র্ক অফিসে পৌঁছায় মৃত্যু হুমকি। তবে এর মধ্যেই বইটি আটলান্টিকের দুই পাড়েই বেস্ট সেলারের তালিকায় চলে যায়। উগ্রপন্থী মুসলিমদের বিক্ষোভের প্রতিক্রিয়ায় তেহরান থেকে অনেক দেশ রাষ্ট্রদূতদের ডেকে পাঠায়। কিন্তু এখানে হত্যার হুমকি পাওয়ার ক্ষেত্রে লেখকই একমাত্র ব্যক্তি ছিলেন না। স্যাটানিক ভার্সেসের জাপানি অনুবাদককে টোকিওতে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় ১৯৯১ সালের জুলাইতে। পুলিশ জানিয়েছিলো যে তাকে কয়েক দফায় ছুরিকাঘাত করে তার অফিসের বাইরে ফেলে রাখা হয়েছিলো। এর আগে সেই মাসেই ইটালিয়ান অনুবাদককে তার অ্যাপার্টমেন্টেই ছুরিকাঘাত করা হয়েছিলো। যদিও তিনি প্রাণে বেঁচে যান। ১৯৯৮ সালে ইরান সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে রুশদিকে হত্যার ফতোয়া থেকে সমর্থন তুলে নেয়। গত দু দশকে রুশদি আরও কিছু বই প্রকাশিত হয়েছে। ব্যক্তিজীবনে তিনি বিয়ে করেছেন চারবার। দুটি সন্তান আছে। সাহিত্যে অবদানের জন্য ২০০৭ সালে নাইটহুড উপাধিও পেয়েছেন। ২০১২ সালে নিজের জীবনভিত্তিক বইও প্রকাশ করেছেন তিনি। বিবিসি

Array
We use all content from others website just for demo purpose. We suggest to remove all content after building your demo website. And Dont copy our content without our permission.
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
Jugantor Logo
ফজর ৫:০৫
জোহর ১১:৪৬
আসর ৪:০৮
মাগরিব ৫:১১
ইশা ৬:২৬
সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১